হায়রে মানবতা: মুখে খাবার তুলে দেয়া উপকারীকেই হত্যা করলো রোহিঙ্গারা

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল

হায়রে মানবতা, যারা আশ্রয় দিল তাদের উপর গুলি চালাতে তোদের হাত একটু কাঁপলো না?

গত দুই বছর যে ছেলেটি তোদের মুখে অন্য তুলে দিয়েছিল। আর সেই ছেলেটিকে তোরা খুন করলি! তোরা এত নির্লজ, তোদের দয়া মায়া বলতে কি কিছুই নেই? অত্র এলাকার আপাময় জনসাধারন এই জন্যই কি তোদের মা-বোনদের নিজের মা-বোন মনে করে আশ্রয় দিয়েছিল? জানি তোদের কাছে এই সমস্ত প্রশ্নের কোন উত্তর নেই! কারন তোরা রোহিঙ্গা,তোরা আসলেই মুসলিম নামের কলংক। তোদের না আছে মায়া,না আছে দয়া।

ছেলেটির ছবিটির দিকে একবার চোঁখ খুলে দেখ, যে ছেলেটিকে তোরা নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করলি। সেই ছেলেটি গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন সেনা বাহিনীর নির্মম সহিংসতার কবলে পড়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল রোহিঙ্গারা। তখন মানবতার রুপরেখা নিয়ে সর্বপ্রথম এই রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িয়েছিল উখিয়া-টেকনাফের মানবতাকামি মানুষ গুলো। তারা পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের মুখে সর্বপ্রথম অন্ন তুলে দিয়েছিল। সেই দিন এই ওমর ফারুক নামের এই যুবকটিও অসহায় রোহিঙ্গাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছিল। অথচ দুই বছর পর এসে সেই রোহিঙ্গারাই তাকে গুলি করে হত্যা করল।

জানা যায়,২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। নিহত যুবক ওই এলাকার মোহাম্মদ মোনাফ কোম্পানির ছেলে এবং হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগ ও জাদিমুরা এম আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এসময় খবর পেয়ে নিহত যুবকের পরিবার লাশ আনতে গেলেও বাঁধা দেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘ওইদিন রাতে নিহত যুবকের বাড়ির সামনে থেকে ফিল্ম স্টাইলে তুলে নিয়ে যান রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার সেলিমের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এক পর্যায়ে তাকে পাশ্ববর্তী পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। খবর পেয়ে ফারুকের ভাই আমির হামজা ও উসমানসহ স্বজনেরা সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা তার মরদেহ আনতেও বাধা দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

নিহতের ভাই আমির হামজা জানান,রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দমন নিপীড়ন শুরু হলে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে অন্যানদের মত আমার পরিবারও সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছিল।

এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সাহায্যের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া হয়। বিশেষ করে আমার ভাই নিহক ওমর ফারুক রাতদিন পরিশ্রম করে অনেক রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। অথচ, আজ সেই রোহিঙ্গারা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমরা জাদিমুরা পাহাড়ের পাশে পড়ে থাকা লাশের জন্য গেলেও উগ্রবাদি একদল রোহিঙ্গা আমাদের লাশ আনতে বাঁধা দেয়। পরে পুলিশের সহযোগীতায় লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।

টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত এবিএম এস দোহা জানিয়েছেন, খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং রাতেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরী করার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা করা হয়েছে। তবে কি কারণে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হল। তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঘটনার আসল রহস্য খুঁজে বের করা হবে। পাশাপাশি এই হত্যা কান্ডের সাথে যারা জড়িত সে সমস্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।